সেলফ-হেল্প কিংবা আত্মনির্ভর সহায়িকার সাথে ব্যাক্তি মননের পরিচয় ঘটিয়ে আমাদের মনোজগত কে যখন ডেল কার্নেগীরা আবিষ্ট করতে শুরু করেন , সেখানেই নিজের অভিজ্ঞতার ঝুলি হাজির করেন নব্য সক্রেটিস , স্টিফেন আর. কোভি । ২৫ মিলিয়ন কপি বিক্রির ইতিহাস নিয়ে তার লেখা “ দা সেভেন হ্যাবিটস অফ হাইলি ইফেক্টিভ পিপল” খুব দ্রুতই বেস্টসেলারের কৃতিত্ব অর্জন করেন ।
বইটিতে কোভি শুরুতেই হাজির হন আমাদের দৃষ্টিভংগী নিয়ে । সূর্যসেন , একই ব্যাক্তি- মুক্তিযোদ্ধা কিংবা দেশদ্রোহী দুটো বিশেষণেই তিনি বিশেষায়িত হতে পারেন কেবল দৃষ্টিভঙ্গী গত ফারাকের কারণেই । কেউ আমরা বাংগালী তাকে পুজো করি , আর সাদা চামড়ার ইংরেজদের কাছে সেই তিনিই ছিলেন চক্ষুশূল । তাই নিজেকে বদলাতে হলে , পরিবর্তন দরকার দৃষ্টিভংগীর। এরই সাথে কোভি দেখাতে থাকেন যে, আজকের যুগে কেন আচার আচরণ বা ব্যাক্তিত্বই আমাদের সামাজিক মর্যাদার অন্যতম মানদন্ড যার নিয়ন্ত্রক আমাদেরই দৃষ্টিভংগী ।
জীবন পালটে দেয়া ৭টি অভ্যাস ।
১. স্ব-প্রণোদনা
নিজের সমস্ত কাজের দায়ভার নিজেকেই নিতে হবে । ভাগ্য , পরিবেশ , সুযোগের অপ্রতুলতাকে পেছনে ফেলে বরং নিজের ভুল স্বীকার করে আরো উন্নতি করতে হবে আপন স্বত্ত্বার। ফেলে আসা হৃত সুযোগের পানে না চেয়ে বরং সামনে আসতে থাকা সুযোগ কে কাজে লাগাতে হবে । “ইশশ ! এত কম সিজিপিএ – চাকরিটা আর পাওয়া হচ্ছেনা” – এধরণের চেতনার বিপরীতে কোভি আমাদের শেখান “সিজিপিএ তো জলে গেলো – এক্সপিরিয়েন্স আর স্কিল ডেভলাপ করে চাকরিটা বাগিয়ে নিতে হবে ”
২.শুরুতেই শেষটা দেখে নেয়া
মনোকাল্পনিক জগতেই আমাদের ভেবে নিতে হবে কীভাবে আমরা যেকোন কাজ সম্পাদন এবং সমাপ্ত করবো । কাজের শেষে হয়তো আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সমর্থ্য হতে পারি , কিংবা মুখোমুখি হতে পারি ব্যার্থতার । তাই সবচাইতে বাজে পরিস্থিতি (Worst Case Scenario) সামলানোর জন্য আর সেখান থেকে বেরিয়ে সফল হবার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে সবসময় । নিজেকে তাই প্রস্তুত রাখতে হবে যেকোন পরিস্থিতির জন্য
৩. শুরুর কাজ শুরুতেই
প্রায়ই আমরা কঠিন কাজ টা রেখে দেই শেষের জন্য । কালকের সবচাইতে কঠিন হোমওয়ার্ক সকালে করলাম নাহ , বিকেলেও নাহ , রাতে এবার তাড়াহুড়ো করে করতে গিয়েই বাধিয়ে ফেললাম তুঘলকি কান্ড । সারাদিন হোমওয়ার্কের টেনশনে অন্যকাজও ভালো হলোনা , আসল কাজ টাও হলোনা । তাই সবচাইতে জরুরী কাজটিই করা শিখতে হবে সবার আগে ।
স্টিফেন কোভির এই ৩ বৈশিষ্ট্য দ্বারা আমাদের ব্যাক্তিগত উন্নয়ন সাধণের পর , তিনি মনোযোগ দেন সামাজিক ভাবে কীভাবে নিজেকে আরো উচ্চ মর্যাদায় আসীন করা যায়।।
৪. উইন-উইন ভাবনা
প্রতিযোগিতার এই পৃথিবীটাকে আমরা কখনই ভালভাবে বুঝতে শিখিনি । অন্যের পরাজয়ে আনন্দ পেতে থাকলে , কখনই মর্যাদাবান হওয়া যায়না, বরং তা আপনাকে আরো অন্ধকারে ঠেলে দিবে । তাই আমাদের শিখতে হবে সম্মিলিত উন্নয়ন সাধণ । আপনি নিজে বায়োলজি সাবজেক্ট টা বেশ ভালো পারেন , আর আপনার বন্ধু কেমিস্ট্রি । আপনি যদি এটুকুতেই আটকে থাকেন তবে আপনার অগ্রগতি হবে স্তিমিত। আপনি তাকে বায়োলজি আর সে আপনাকে ভালো কেমিস্ট্রি শেখানোর মাঝেই উভয়ের মংগল। তাই উইন-উইন সিচুয়েশন তৈরী করে, নিজের সম্মানের গ্রাফ আরো উপরে ওঠাতে থাকুন , তার দ্বিগুন গতিতে হয়ে উঠুন আরো বেশি “ইফেক্টিভ”।
৫. অন্যকে বুঝতে শিখুন
নেটওয়ার্কিং এর যুগে কম্যুনিকেশন স্কিলের গুরুত্ব মোটেও যেন-তেন নয় । কিন্তু এখানেই আমরা ভুল টা করি । অন্যের সমস্যা না বুঝেই আমরা নিজেদের সমাধানের ঝুলি নিয়ে বসে পড়ি । আপনি মায়োপিয়া ( হ্রস্ব দৃষ্টি) তে আক্রান্ত হয়ে কোন বন্ধু কে তা বলার পর , তিনি তার + (প্লাস) ডায়াপ্টার লেন্স এর চশমা খুলে আপনাকে দিয়ে দিলেও তাতে আসলে কোন সুফল হবেনা। কিন্তু আমরা বন্ধুরূপে হরহামেশা এই কাজটাই করি । অন্যের সমস্যা বুঝে উঠার আগেই , নিজেদের জাহির করতে থাকি । ফলশ্রুতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের কাছের মানুষেরাই আর নষ্ট হয় সম্পর্কের গাঢ়ত্ব। তাই ভালোভাবে শুনুন , অনুধাবন করতে থাকুন আর অন্যকে বুঝতে শিখুন। তবেই বাড়িয়ে দিতে পারেন সহযোগিতার হাত।
৬. সিনার্জাইজ – সহযোগিতার পৃথিবী
উইন-উইন ভাবনাকে আরো একটু বড় মাপে দেখতে দেখতেই তৈরী হয় সিনার্জি - পারষ্পরিক সহায়তা । শৈবাল আর ছত্রাক মিলে যেভাবে লাইকেন গড়ে তুললো , সেভাবেই বড় কম্যুনিটি তৈরী করে আমরা অনেক বেশি সফল হতে পারি। দেশে ছোট ছোট অনেক মানবসেবা সংঘের পরিবর্তে বরং কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়ে সবাই একই ভাবে নির্দিষ্ট কাজের দিকে এগুলেই বরং সাফল্যের সম্ভাবনা তৈরী হয় । সিনার্জি মানেই হলো ১+১ > ২ কেননা ২ এর মিলিত শক্তিতে তৈরী হয় আরেকটি আবিষ্ট শক্তি যা তার ক্ষমতাকে কয়েক গুন বাড়িয়ে দিবে ।
এই ৩ বৈশিষ্ট্য অর্জন করে নিজেকে সমাজ উপযোগী করে তোলার পর স্টিফেন কোভি তার উল্লেখিত ৬ টি গুনকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিতেই সামনে আনেন তার সপ্তম বৈশিষ্ট্য।
৭. নিজেকে করে তুলুন শাণিত
অন্ধভাবে ধুকতে না থেকে বরং বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে আমাদের সফল হতে হবে যেখানে আমাদের কাজ করতে নিজেদের উপর , তীক্ষ্ণ করে গড়ে তুলতে হবে নিজেদের সকল দক্ষতাকে । শারীরিক , আত্মিক , সামাজিক , মানসিক – প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিজেকে আরো ক্ষুরধার করে গড়ে তুলতে হবে । পৌঁছাতে হবে দক্ষতার সর্বোচ্চ স্তরে। তবেই সম্ভব হবে “ইফেক্টিভ” হয়ে ওঠা।