This article is published on Baset Magazine https://www.basetbd.com/2020/05/blog-post.html
শর্টকাট রাস্তা খোঁজা , সহজে কম পরিশ্রমে কিছু একটা করে ফেলার মনোবৃত্তি আমাদের মাঝে খুবই সাধারণ । বারবার উঠে টিভির বাটন না চাপার জন্য রিমোট কন্ট্রোলের আবির্ভাব , সিঁড়ি বেয়ে উপরে না উঠতে এলেভেটর (লিফট) এর উদ্ভাবন আর ইদানিং কালে হাতে টাইপ না করে ভয়েস রেকগনিশনের মাধ্যমেই কাজ সেরে নেয়া – সবই ইঙ্গিত দেয় আমাদের কম শ্রমে বেশি কাজ করতে পারার পরিকল্পনার ব্যাপারে । সভ্যতার গঠনে এই আলসেমির গুরুত্ব বেশি বৈ কম নয় ।
মানুষের আচরণ নিয়ে কাজ করা বিজ্ঞানীরা এই আলসেমিকে নাম দেন “ Cognitive Miser ” । আলোচনা করা হয় যেকোন সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে মানুষ বুদ্ধিবৃত্তিক পরিশ্রমে মানুষ কতটা কিপ্টেমি করতে পারে। আজকাল কার সময়ে খুব বেশি ব্রেইনস্টর্মিং না করেই নোট-গাইড দেখে প্রবলেম সলভ , কোন একজনের ইন্টেলেকচুয়াল কাজ দেখেই তা হুবুহু নিজে করে নেয়া – আমাদের বেশিরভাগেরই স্বভাব ।
এই কাজের ফলাফল ব্যখ্যা করা হয় “ Principle of Least Effort ” এর মাধ্যমে । গুইলেমো পেরেরোর আবিষ্কার আর জর্জ কিংসলে জিফ এর বিষদ ব্যখ্যার মাধ্যমে এই তত্ত্ব গবেষণা জগতে ছড়িয়ে পড়ে যার উপর ভিত্তি করে Zipf’s Law থেকে শুরু করে আরো অনেক তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন গবেষকেরা । “ Principle of Least Effort ” এ আলোচিত হয় মানুষ বা অন্যান্য প্রাণী বা এমনকি ভালোভাবে ডিজাইন করা একটি মেশিন কীভাবে সবথেকে কম পরিশ্রমে আদি অবস্থান থেকে শেষ অবস্থানে যাবে । আর এই কম পরিশ্রমের বা কম বাঁধার পথ অনুসরণ আমরা হরহামেশাই দেখি। এই তত্ত্বই মূলগতভাবে ১ম পর্বে আলোচিত নীতিসমূহের “কেন” অংশটি ব্যখ্যা করে।
Zipf’s Law এর ঘটনাটি কেন বেশি ঘটে তা “Brainwash” শব্দটি দিয়েই ব্যখ্যা করি । কাউকে প্রভাবিত করে তার চিন্তায় মননে কোন বিশেষ চেতনার প্রবেশ ঘটানো হলে আমরা খারাপ অর্থে “Brainwash” , ভালো অর্থে “Teach” শব্দের ব্যবহার করি। আমাদের মত যাদের মাতৃভাষা ইংরেজি নয় , তারা এই দুটো শব্দ দিয়ে কাজ চালিয়ে পছন্দ করলেও , পরিস্থিতির বিবেচনায় ইংরেজি ভাষায় এদের সমার্থক অন্য শব্দের ব্যবহার বাঞ্চনীয়। কিন্তু আমরা কম পরিশ্রম করে , এই দুটো শব্দ দিয়েই কাজ সেরে ফেলি । এই দুটো শব্দের ব্যবহারের তুলনায় indoctrinate , imbue , drill into , hammer into , train এই শব্দের ব্যবহার খুবই কম , একেবারেই নগন্য। সেখানে inculcate শব্দটি দেখা যাবে ব্যবহারই হয়না । এই ঘটনা কেবল বিদেশি ভাষায় নয় , নিজেদের ভাষায়ও এই দিকটি আমরা দেখি , যার কারণেই কঠিন শব্দ হারিয়ে যায় । সংস্কৃত থেকে মাঝের আরো পর্যায় পেরিয়ে আধুনিক বাংলায় আমরা এসে পৌঁছেছি।
একইভাবে কাজ করে Parreto Principle , কেননা আপনার করা কাজগুলোর মাঝে অল্প কিছু কাজই বেশিরভাগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে প্রতীয়মান হয় । তাই সে ২০% কাজই আপনার সাফল্যের ৮০% নির্ধারণ করবে ।
নোভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ ছড়ানোর ক্ষেত্রে আমরা যে এক্সপোনেনশিয়াল ট্রেন্ড দেখতে পাই , তার সামঞ্জস্য ১ম পর্বের “Metcalfe’s Law” : Network Strength Analysis অংশে আমরা দেখতে পাই ।
শুরুতে ১ জন থেকে ২ জন দিয়ে শুরু হলেও খুব দ্রুতই শতকের ঘর , তার চেয়েও দ্রুত হাজারের ঘর ছুঁয়ে ফেলা এই ভাইরাস ছড়িয়েছে ত্বরিৎ গতিতে । ১ জন মানুষ যতজনের সংস্পর্শে আসেন , ১০ জন তার চাইতে অনেক বেশি মানুষের স্পর্শে আসবেন – এটাই স্বাভাবিক আর এই কারণে ছককাগজে বেশ খাড়াভাবেই বেড়েছে সংক্রমণের হার।
প্রায় একই হারেই কিন্তু এটি কমে আসবে বলে গানিতিক মডেল অনুযায়ী দাবি করা হয় । এখানেই চলে আসে রিসোর্স স্বল্পতার প্রেক্ষাপট । সাধারনের মাঝে ইম্যুনিটি তৈরী হয়ে যাওয়ায় এই ভাইরাস তখন রিসোর্সের সংকটে পড়ে যাচ্ছে আর তার বৃদ্ধিও নেমে আসছে।
ঠিক এই ঘটনাটি জনসংখ্যার ইস্যু তেও দেখা যায় । ব্যাক্টেরিয়ার মতো অণুজীব সূচকীয় হারে সংখ্যাবৃদ্ধি করে। ৭ ঘন্টার মধ্যেই ১টি ই.কোলাই ব্যাক্টেরিয়া্ম থেকে ২০ লক্ষ নতুন ব্যাক্টেরিয়া হতে পারে। তবে বাঁধ সাধে খাদ্য , স্থান ইত্যাদির সংকট । অনুকূল পরিবেশ না পেলে এই বৃদ্ধি স্তিমিত হয়ে আসে । এক্সপোনেনশিয়াল গ্রোথের এই শর্ত নিয়েই তাই চলে আসে “লজিস্টিক ইক্যুয়েশন” ।
যাই হোক , জনসংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে “Carrying Capacity” (ধারণক্ষমতা) এর উপর ভিত্তি করেই অনুমান করা হয় যে কোন জীব সর্বোচ্চ কতটুকু সংখ্যাবৃদ্ধি করবে। এই ধারণক্ষমতার সংকটই মূলত এক্সপোনেনশিয়াল বৃদ্ধির উপর শর্ত জুড়ে দেয় এবং লাগাম টেনে ধরে সেই বৃদ্ধির উপর।
এই দুপর্বের আলোচনার, ১ম পর্বে উঠে এসেছে Pareto Principle, Zipf’s Law , Price’s Law , Metcalfe’s Law এর মতো গানিতিক মডেল সমূহ এবং তাদের বাস্তবিক বা প্রায়োগিক আলোচনায় আমরা দেখতে পাই , সূচকীয় বৃদ্ধি কতটাই সাধারণ । আর ২য় পর্বে আমরা পরিচিত লাভ করি এই বৃদ্ধির স্বাভাবিকতার সাথে। সূচক নিয়ে এভাবেই দিনের পর দিন আলোচনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব। মাত্র দুই পর্বের ক্ষুদ্র ব্লগ দিয়ে কাউকে সূচক সম্পর্কে অনেক জানানো মূল উদ্দেশ্য ছিলোনা , বরং লক্ষ্য ছিলো সূচক সম্পর্কে জানার আগ্রহ তৈরী করা।